ডায়াবেটিস ও ইনসুলিন


ডায়াবেটিস আজ দক্ষিণ এশিয়ার ঘরে ঘরে৷ হতাশার কারণ নেই, কেননা আছে ইনসুলিন নামের একটি পদার্থ৷ নিয়মিত ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিলে ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায় সাধারণ জীবনযাপন করতে পারেন৷

 

মানুষ না খেয়ে বাঁচতে পারে না৷ অথচ কিছু কিছু মানুষের শরীর শর্করা ‘হজম' করতে পারে না৷ তাদের যে রোগ, তার নাম ডায়াবেটিস, বাংলায় যাকে বলে বহুমূত্র৷ ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিবার খাবার আগে একটি হরমোন ইঞ্জেকশন নিতে হয়, যার নাম ইনসুলিন৷ ইনসুলিন আবিষ্কৃত হবার আগে ডায়াবেটিস ছিল একটি মারাত্মক রোগ৷ মানুষ ডায়াবেটিসের লক্ষণ চেনে হাজার হাজার বছর ধরে৷ অতীতে কমবয়সিরাই এই রোগে আক্রান্ত হত৷ লক্ষণ ছিল তেষ্টা আর পেট-জ্বলে-যাওয়া খিদে৷ পর্যাপ্ত খাবার খাওয়া সত্ত্বেও রোগীরা অপুষ্টিতে মারা যেতো৷

 

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষে কুকুরদের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, ডায়াবেটিক-দের যে পদার্থটির অভাব, সেটির উৎস হল পাকস্থলীর কাছে পরিপাকরস নিঃসরণকারী গ্ল্যান্ড প্যানক্রিয়াস৷ প্যানক্রিয়াস নিঃসৃত নির্যাস দিয়ে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করার প্রচেষ্টা চলে৷ কিন্তু সেই নির্যাস বার করার সময় প্যানক্রিয়াসের পরিপাক এনজাইম-গুলি বাকি সব পদার্থ বিনষ্ট করে ফেলে৷ চূড়ান্ত সমাধানটি দেন ক্যানাডা-র দুই চিকিৎসাবিদ: ফ্রেডেরিক ব্যান্টিং এবং চার্লস বেস্ট৷ তাঁরা ইনসুলিন আবিষ্কার করেন ১৯২০ সালে৷

 

ইনসুলিনের কল্যাণেই দেহের কোষগুলি খাদ্য থেকে রক্তে যে শর্করার অণুগুলি ঢোকে, তা শুষে নিতে পারে৷ শর্করার অণু থেকে শরীরের যাবতীয় প্রক্রিয়া তাদের জ্বালানি পায়৷ ইনসুলিন না থাকলে দেহের কোষগুলি বাস্তবিক না খেয়ে মরে – তা রোগী যতোই খাদ্য গ্রহণ করুক না কেন৷ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ব্যাপক হানি ঘটে৷ ব্যান্টিং ও বেস্ট মৃত পশুর প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন সংগ্রহ করেছিলেন৷ সেই ইনসুলিন দিয়ে তাঁরা প্রথমে পশুর ও পরে মানবের শরীরে সফলভাবে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করেন৷ মৃত পশুর প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন বার করা ছিল যেমন কঠিন তেমনই ব্যয়সাপেক্ষ৷

 

গত শতাব্দীর আশির দশকের আগে সস্তায় ইনসুলিন উৎপাদনের কোনো প্রক্রিয়া আবিষ্কৃত হয়নি৷ সেই সময় ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুতে মানুষের ইনসুলিন জিনটি ঢুকিয়ে নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে ইনসুলিন উৎপাদন করা হয়৷ কাজেই ইনসুলিনই প্রথম ওষুধ, যা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে উৎপাদন করা হয়েছে৷ ইনসুলিনের কল্যাণে ডায়াবেটিসের রোগীরা আজ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন৷


অথচ সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীদের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে৷ এর কারণ হল বেশি খাওয়া ও কম দৌড়ঝাঁপ বা হাঁটাচলা করা৷ যার ফলে ডায়াবেটিস আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গী হয়ে উঠেছে৷ সারা বিশ্বে প্রায় ২৫ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন৷ তবে খাওয়াদাওয়া ঠিক রাখলে আর নিয়মিত ব্যায়াম করলে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব৷

 

তথ্যসূত্র: হাতের মুঠোয় ডায়াবেটিস –ড. শ্যামল চক্রবর্তী

 

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত, কার্যকর ও আসল ইনসুলিন কিনতে এখানে ক্লিক করুন